এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?- মারুফ কামাল খান

এটা কি মগের মুল্লুক নাকি?- মারুফ কামাল খান

অবাক হওয়াটা প্রায় ভুলেই গিয়েছি।এই দেশে আর কোনো কিছু দেখেই বিষ্মিত হইনা। কিন্তু আফটার অল মানুষ তো। পাথর তো না। ভেতরে তো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়ই। অনেক কিছু দেখে-শুনে-জেনে রাগ হয়। ভেতরটা জুড়ে ক্ষোভ ও ক্রোধ গর্জাতে থাকে। দাঁত কিড়মিড় করে স্বগতোক্তির মত বিড়বিড় করি: এটা কি মগের মুল্লুক নাকি!
ভাবনায় ছেদ পড়ে। আরে কী বললাম এটা! মগের মুল্লুক ও মাৎস্য ন্যায়ের স্বেচ্ছাচারিতার মাত্রা তো সেই কবেই ছাড়িয়েছে। সৈয়দ মুজতবা আলীর কালজয়ী বই 'দেশে-বিদেশে'তে পড়েছি দস্যু বাচ্চা-ই-সাক্কো কাবুল দখল করে কী ভয়ঙ্কর নৈরাজ্যের রাজ কায়েম করেছিল তার বিবরণ। ইদি আমিনের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছিল। এ বঙ্গদেশে হালে সেই রকম অনিয়ম, নৈরাজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার রাজত্ব কায়েম হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
দুর্নীতি, লুট-লোপাটের প্রকাশ্য মচ্ছব চলছে সবখানে। অবৈধ শাসন-লুণ্ঠন জারি রাখতে সকলকেই লুটে খাওয়ার খোলা ছাড়পত্র দিয়ে রাখা হয়েছে। এই 'উন্নতির যামানা'য় থানা-ইউনিয়ন লেভেলের লুটেরাদের কাছেও শত কোটি টাকার হদিস মিলছে। পিয়ন, চাপরাশি, ড্রাইভার শ্রেণীর লোকও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনেছে। টাউট-বাটপারেরা জয় বাংলা বলে আগে বেড়ে লুটেপুটে খাচ্ছে সবকিছু ওলোট পালট করে। বন্দনা ও নান্দিপাঠের কোলাহলে সব অপরাধ ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
এই লুটের রাজত্বে প্রতিযোগিতায় এ-প্লাস পেয়ে আছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রকাশ্য সেই লুটের মচ্ছবের যারা হোতা তারা নির্লজ্জ ও বেপরোয়া। ওদের বিরুদ্ধে টুকটাক কিছু নিউজ করে রোজিনা ইসলাম দুর্বিনীত সেই দুর্বৃত্তচক্ররে ক্ষিপ্ত করেছেন। আজ তিনি সংবাদ সংগ্রহের পেশাগত কাজে মন্ত্রনালয়ে গেলে তাকে ওরা আটকে ফেলে। মিথ্যা অভিযোগে দিনভর আটকে রেখে তাকে শারিরীক-মানসিকভাবে প্রবল হেনস্তা করা হয়। ছয় ঘন্টা ধরে বেআইনি ভাবে একজন সাংবাদিকে আটক রাখলেও সরকার, প্রশাসন, আইন প্রয়োগ সংস্থার সবাই ছিল নীরব-নির্বিকার। তাকে উদ্ধার করতে কেউই হস্তক্ষেপ করেনি। প্রথম আলো পত্রিকার পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক রোজিনা আটকাবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ এসে তাকে চিকিৎসার নাম করে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আসলে তাকে মিথ্যা মামলায় আটক করে থানায় নেয়া হয়েছে। কী স্পর্ধা!
স্পর্ধার কথা লিখে আবারো থমকে গেলাম।
আসলে কার স্পর্ধা?


এদেশ এখন লুটেরাদের দখলে। সবখানে তাদের অবাধ রাজত্ব ও দোর্দণ্ড প্রভাব-প্রতাপ। নৈশ সিলমারা উৎসব করে এই লুটেরা চক্র সরকার বানিয়েছে, নিত্য তাদেরই অজস্র কারসাজি ও ফাঁপরবাজিতে সরকার টিকছে। সেই মহা রক্ষক-ভক্ষকদের ঘাঁটাতে যাওয়াটাই তো আসলে স্পর্ধা। ওদের টিকি ছুঁতে গিয়েই তো আজ রোজিনা ইসলামের এই হেনস্তা। এটা কতদূর যাবে জানিনা। সাগর-রুনি থেকে শুরু করে কাজল পর্যন্ত যারা বেয়ারা হয়েছে তাদের পরিণতি দেখেও কি রোজিনা ইসলামের আক্কেল হয়নি? তৈলমর্দন বিটে নাম লিখিয়ে তমঘা-ইনাম ও তরক্কি হাসিলের সময় দ্রুত বয়ে যেতে দেখেও রোজিনা ইসলাম এই বোকামি কেন যে করতে গিয়েছিলেন!
???? স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে ছয় ঘন্টা আটকে রেখে নির্যাতনের পর গুরুতর অসুস্থ সাংবাদিক রোজিনাকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাচ্ছে পুরুষ ও নারী পুলিশের দল।????

Copyright  ©️জনাব, মারুফ কামাল খান।